তবে আসাদ সরকারের পতন কিন্তু রাশিয়ার মর্যাদার ওপর আঘাত।
এদিকে রুশ বিমান হামলায় সিরিয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের খবর নিয়মিত প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিন্তু যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সেখানে (সিরিয়ায়) পাঠিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের রাশিয়ার সামরিক অভিযান প্রত্যক্ষ করার ব্যবস্থাপনা করতেও দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার পক্ষ থেকে সামরিক সহায়তার বিনিময়ে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের (রাশিয়াকে) ৪৯ বছরের জন্য হেমেইমিমের বিমানঘাঁটি ও তারতুসের নৌঘাঁটি ইজারা দেয়। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল রাশিয়া। আফ্রিকার ভেতরে ও বাইরে সামরিক ঠিকাদারদের স্থানান্তর করার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই ঘাঁটিগুলো।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মস্কোর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো এখন ওই রুশ ঘাঁটিগুলোর কী হবে?
বাশার আল-আসাদের মস্কোয় পৌঁছনোর বিষয়ে ঘোষণা করে রাশিয়ার পক্ষ থেকে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে অন্য একটা বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধী পক্ষের’ প্রতিনিধিদের যোগাযোগ ছিল। এ ছাড়া রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভির উপস্থাপক জানিয়েছেন, বিরোধী নেতাদের পক্ষ থেকে সিরিয়ার ভূখণ্ডে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিরিয়ায় অবস্থিত রুশ ঘাঁটিগুলোকে ‘উচ্চ পর্যায়ের সতর্কতায়’ রাখা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, ‘এই মুহূর্তে সেগুলোর ওপর কোনো গুরুতর ঝুঁকি নেই।’
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন বাশার আল-আসাদ। ক্রেমলিন কিন্তু তার ওপর ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছিল। আসাদ সরকারের পতনের বিষয়টাকে মস্কোর কাছে একটা ধাক্কা ছাড়া অন্য কোনো দিক থেকে উপস্থাপন করতে গেলে কিন্তু রুশ কর্তৃপক্ষকে বেশ হিমশিম খেতে হবে। তা সত্ত্বেও কিন্তু সেই চেষ্টাই করে চলেছে রাশিয়া। আর একই সঙ্গে এই পরিস্থিতিতে ‘দোষারোপের’ জন্য বলির পাঁঠাও খুঁজছে তারা। যেমন, রবিবার রাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রধান সাপ্তাহিক নিউজ শোতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে নিশানা করা হয়। বিদ্রোহীদের রুখতে যুদ্ধ না চালানোর জন্য সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সমালোচনা করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ইয়েভগেনি কিসেলেভকে বলতে শোনা যায়, ‘সবাই দেখতে পাচ্ছিল, সিরীয় কর্তৃপক্ষের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই নাটকীয় হয়ে উঠছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘কিন্তু আলেপ্পোতে কার্যত বিনা লড়াইয়ে (সামরিক) অবস্থান ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষিত অঞ্চলগুলো একের পর এক আত্মসমর্পণ করে দেওয়া হয় এবং তারপর উড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও তারা (সরকারি সেনাবাহিনী) অনেক বেশি পোক্ত ও সুসজ্জিত ছিল এবং আক্রমণকারী পক্ষকে তারা বহুগুণে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এটা (কেন এমন পরিণতি হলো) কিন্তু একটা রহস্য!’
ওই খবরের অনুষ্ঠানে উপস্থাপককে আরো দাবি করতে শোনা যায়, ‘রাশিয়া সব সময়ই সিরিয়ায় (বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে) সমঝোতা আশা করেছিল।’
এরপর তার শেষ কথা ছিল, ‘সিরিয়ায় যা ঘটছে সে সম্পর্কে আমরা অবশ্যই উদাসীন নই। তবে আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে রাশিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তা, বিশেষ করে সামরিক অভিযানের (ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধ) অঞ্চলে কী ঘটছে।’
এখানে রাশিয়ার নাগরিকদের জন্য এখানে একটা পরিষ্কার বার্তা রয়েছে। আর তা হলো, রাশিয়া ৯ বছর ধরে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সম্পদ জুগিয়ে চললেও রাশিয়ার জনসাধারণকে বার্তা দেওয়া যে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে।
Leave a Reply