টেস্ট ক্রিকেটে দুইযুগ স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু গেল ২৪ বছরে সমপরিমাণ ম্যাচ জিততে পারেনি। এই ফরম্যাটে এখনো পায়ের তলায় মাটি খুঁজেই চলছে টাইগাররা। এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে চারদিনের ম্যাচের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। অন্যদিকে যতদিন আসছে ততই সাদা পোশাকের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে ক্রিকেটাররা। টেস্ট ক্রিকেটে একেবারেই ধারবাহিক নয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। কিন্তু পরের দু’টি সিরিজে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয় বাজেভাবে। বিশেষ করে চরমভাবে ফুটে ওঠে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা। সেই কারণেই আবারো আলোচনায় এসেছে ঘরোয়া চারদিনের ক্রিকেট। এখানে যে পাইপলাইন তৈরি হওয়ার কথা সেটিও হচ্ছে না। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট নিয়ে ক্রিকেটারদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে কি না, এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে জাতীয় দলের নির্বাচক আবদুর রাজ্জাককে। তিনিও অকপটে দায়টা তুলে দিয়েছেন টি- টোয়েন্টি ক্রিকেটের ঘাড়ে। তার মতে সর্বনাশের কারণটা এখানেই। বলেছেন, ‘সবাই টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য উদগ্রীব। সবাই টি-টোয়েন্টিকে ক্রিকেট মনে করছে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারণ। যদিও আমি মনে করি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ থেকেই তারা বেশি আয় করে। তারপরও কেন যেন টি-টোয়েন্টির প্রতি বাড়তি ঝোঁক বেশি।’
অন্যদিকে একে একে ঘরোয়া চারদিনের ক্রিকেট থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছেন সিনিয়র ক্রিকেটাররা। এমনকি জাতীয় দলেও তৈরি অভিজ্ঞদের হচ্ছে শূন্যতা। সবশেষ জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) এ ১৯ বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা ফরহাদ হোসেন ব্যাট-বল তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় দলে খেলা ইমরুল কায়েসও লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। শুধু তারাই নন, তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও এখন আর খেলছেন না। তামিম খেলবেন কিনা সেটি নিয়েও কোনো কিছু জানা যাচ্ছে না। এর আগেও ইনজুরি কিংবা ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে সাকিবের বিকল্প বের করতে ঘাম বেরিয়ে গেছে টিম ম্যানেজমেন্টের। মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল কিংবা মাহমুদউল্লাহদের নিয়ে যতই সমালোচনা থাকুক না কেন, তাদের বিকল্পও কেউ হতে পারেননি। আব্দুর রাজ্জাক এই বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ক্রিকেটার ১৫/২০ বছর ক্রিকেট খেলে চলে যায়, তখন সঙ্গে সঙ্গে ওই ক্রিকেটারের বিকল্প পাওয়া একটু মুশকিল। এটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মনে করি। তারপরও আমাদের দেশে যারা তরুণ ক্রিকেটার আছে। আমি খুব আশাবাদী তাদের নিয়ে। এখান থেকে গেলে তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ওই লেভেলটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে আরেকটু সময় লাগবে ওদের।’
আগামী মাসের ১১ তারিখে টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে এনসিএল মাঠে গড়াবে। বিপিএল’র আগে এই টুর্নামেন্ট খেলে ক্রিকেটাররা ভালো প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পাবেন। এই দল নিয়ে ধারণা দিলেন রাজ্জাক, ‘জাতীয় লীগের চারদিনের ম্যাচ ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দল হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে না। চারদিনের ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের বেশির ভাগই থাকবে। অল্প কিছু ক্রিকেটার হয়তো থাকবে না। আমাদের তো এমনিতেও খুব বেশি ক্রিকেটার নেই। আটটা দল থাকবে। একেক দলে ১৫ জনের সদস্য থাকবে। এই লীগে আমাদের তরুণ ক্রিকেটারদের দেখার একটা সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।’
সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা বড় চিন্তার নাম। এনসিএলকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আঁতুড় ঘর বলা হয়। এনসিএল দিয়ে দলের ঘাটতি পূরণ করতে হয়। জাতীয় লীগকে ওই মানদণ্ডে নেয়া যাচ্ছে না। জাতীয় লীগে একটা ক্রিকেটার ১০০ করে জাতীয় দলে ১০ রান করছে। এই গ্যাপটা কেন হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাক বলেছেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে আমি মেনে নিচ্ছি, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটা মানবো না। জাতীয় লীগে খেলা, কাউন্টি খেলা, অস্ট্রেলিয়া ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলা আর টেস্ট ম্যাচ আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কখনই এক হবে না। আমাদের দেশের টেস্টের মানদণ্ডে নেয়া তো সম্ভব না। কাছাকাছি হয়তো নেয়া যাবে। বেশ কয়েকবছর আমাদের উইকেটের বেশ উন্নতি হয়েছে। যারা মাঠে যায় তারা হয়তো দেখছেন। বলও পরিবর্তন করা হয়েছে। কীভাবে ডিফিকাল্টি ফেস করতে হয় এটা দেখা যায়। একটু একটু করে হলেও যেন আগাচ্ছে ব্যাপারটা।’
অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নেই অভিজ্ঞ মুশফিক চোট ছিটকে দিয়েছে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকেও। তরুণদের জন্য এই সিরিজ তাই পরীক্ষার মঞ্চ। তবে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ মেলেনি চলমান এনসিএল’র সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক অমিত হাসানের। এবারের এনসিএল-এ ৮ ইনিংসে ৮১ গড়ে ৫৬৭ রান করেছেন তিনি। সিলেটের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটার হাঁকিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। তাকে নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি যে ভালো খেলুক। এত ভালো খেলুক যেন আমাদের কোনো সন্দেহ না থাকে। আমাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যদি এ রকম হয় যে...আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা খেলোয়াড়কে সন্দেহ নিয়ে ইন্ট্রিডিউস করিয়ে দেয়া হয়। এটা হচ্ছে আমার পয়েন্ট অব ভিউ, যদি ক্লিক করে তাহলে ফাইন। আর ক্লিক না করলে দেখা যায় একটা ভালো প্রসপেক্ট আমাদের নষ্ট হয়েও যেতে পারে চাপের কারণে, বিভিন্ন কারণে হতে পারে। চেষ্টা করবো ধারাবাহিকতা ধরে রেখে যেন মোটামুটি কনফার্ম হয়ে নেয়া যায়। আমি কখনও বলতে পারবো না এই ছেলেকে নিলে ভালোই খেলবে।’