বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিতে নিজের অনীহার কথা জানিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর তার নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ারই কথা ছিল। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আলোচনা করে শান্তর প্রতি আস্থা রাখে। সঙ্গে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সহ-অধিনায়ক হিসেবে রাখা হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। বিসিবি’র একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে শান্তকে ওয়ানডেতে রেখে টেস্টের নেতৃত্ব মিরাজের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে নিয়ে রেখেছিল দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার কর্তারা। সেই হিসেবে ওয়েন্ট ইন্ডিজ সিরিজে শান্ত কেমন করে সেটি ছিল তাদের দেখার বিষয়। তবে সেটি আর হচ্ছে না, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ থেকে ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন শান্ত। তার নেতৃত্বে দল প্রথম ম্যাচে হারলেও পরে দাপুটে জয় তুলে সমতায় ফেরে সিরিজে। অধিনায়ক নিজেও ব্যাট হাতে ফিফটি হাঁকিয়ে নিজের যোগ্যতার আরো একবার প্রমাণ রাখেন। তবে হঠাৎ করেই বদলে যায় পরিস্থিতি চোটে পড়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে গতকাল তার মাঠে নামা হয়নি। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজও তার খেলা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিসিবি’র প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) শারজাহতে এমআরআই করানো হয় শান্তর। দলের ফিজিওর রিপোর্ট ও স্ক্যান রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছে তার বাঁ কুঁচকিতে গ্রেড-২ স্ট্রেইন। কিছু সময়ের বিশ্রাম ও পুনর্বাসন প্রয়োজন তার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেছেন তিনি।’ তার মানে এই সিরিজে নেতৃত্বে দিবেন সহঅধিনায়ক মিরাজ। বলার অপেক্ষা রাখে না অধিনায়ক হিসেবে তার সামনেও নিজেকে প্রমাণের দারুণ সুযোগ।
প্রশ্ন ছিল শান্ত কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে পারবেন? তার মাঠে ফিরতে আসলে কতটা সময় লাগবে। এ বিষয়ে বিসিবি’র পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেবাশিষ চৌধুরী বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজেও তাকে পাওয়া যাবে না। দুই সপ্তাহ পর আমরা তার অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখবো। পুনর্বাসন চালিয়ে নেয়ার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফিরে আসবে সে।’ তার মানে দলকে নেতৃত্ব দেবেন সহঅধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও রোববার রাতেই বিসিবি শান্তকে অধিনায়ক করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছিল। বিসিবি’র একটি সূত্র জানিয়েছে শান্তর পরিবর্তে দলকে নেতৃত্ব দেবেন মিরাজ। সূত্রটি জানায়, ‘শান্তকে অধিনায়ক রাখা হয়েছিল আরো একটু সুযোগ দেয়ার জন্য। তবে বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল যদি সে ফেল করে তাহলে মিরাজই হবে টেস্টে অধিনায়ক। এটি আজ বা কাল হওয়ার কথা ছিল। সে ভাবনা থেকেই মিরাজকে সহঅধিনায়ক রাখা হয়েছিল। এখন শান্তর অবর্তমানে দলকে ওই নেতৃত্ব দিবে। হ্যাঁ, অবশ্য এটি তার জন্য অনেক বড় সুযোগ। আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি বিকল্পও নেই। যে কারণে ও যদি পারে তাহলে দলের জন্য চিন্তা কমবে। আর শান্ত ঠিক হয়ে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজে ফিরবে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডের আগে শান্ত নিজের ইনজুরি নিয়ে বলেছিলেন, ‘এখন ভালো অনুভব করছি, তবে কিছুটা (সমস্যা) রয়ে গেছে।’ শেষ পর্যন্ত বড় হয়েই দেখা দিলো ইনজুরি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডেতে তো বটেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজেও খেলতে পারবেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। গতকাল আফগানদের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সহ-অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্যারিয়ারের শততম ওয়ানডেতে দেশকে প্রথমবার নেত্বত্ব দিলেন এই অলরাউন্ডার। টেস্ট দলের সহ-অধিনায়কও তিনি। সব ঠিক থাকলে নিজের ৫০তম টেস্টে দেশের হয়ে টেস্ট অধিনায়কত্বেও অভিষেক হবে ২৭ বছর বয়সী ক্রিকেটারের। আফগানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন শান্ত। তবে সেই ম্যাচেই ফিল্ডিংয়ের সময় কুঁচকিতে টান লেগে মাঠ ছেড়ে যান তিনি। সেই চোটই তাকে মাঠের বাইরে রাখছে আরও অনেকটা সময়। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে আঙুলে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন মুশফিকুর রহীম। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজে থাকবেন না অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানও। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ সিরিজটির আগে আফগানদের বিপক্ষে ছোট্ট এই ওয়ানডে সিরিজে তাই বড় খেসারতই দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চক্রে এটিই বাংলাদেশের শেষ সিরিজ। এখন পর্যন্ত খেলা ১০ ম্যাচে ৩ জয়ে ২৭.৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে ৯ দলের মধ্যে ৮ নম্বরে বাংলাদেশ। আর ১৮.৫২ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে ক্যারিবিয়ানরা।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে আগামী ২২শে নভেম্বর শুরু হবে প্রথম টেস্ট। এরপর জ্যামাইকার স্যাবিনা পার্কে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ৩০শে নভেম্বর। টেস্ট সিরিজ শেষে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দুই দল। ওয়ানডে সিরিজের সব ম্যাচ সেন্ট কিটসে। আর সেন্ট ভিনসেন্টে হবে বিশ ওভারের সিরিজ।

বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াড
সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, লিটন কুমার দাস (উইকেটরক্ষক), জাকের আলী, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা ও হাসান মুরাদ।